স্কুল-কলেজের সামনে, রাস্তার মোড়ের দোকানে, বিল্ডিংয়ের ছাদে, চিপা গলিতে, খালি মাঠের এক কোণায় যেসব উশৃংখল কিশোর খামকা আড্ডায় মত্ত থাকে, তাদের আপাত দৃষ্টিতে কিশোর গ্যাং বলা হয়। তাদের অনেকেই বিভিন্ন নেশাদ্রব্য সেবন করে। কেউ কেউ মাদক ব্যবসাও করে। সামান্য একটা বিষয় নিয়ে যেকারো সাথে তারা খারাপ আচরণ করে। তারা স্কুল-কলেজের সামনে দামী মোটরসাইকেল বুম বুম করে মেয়েদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চায়।
ছাত্রীদেরকে উদ্দেশ্য করে টিটকারি-মশকারি করে। ইভটিজিং করে। ওই মেয়ে পাত্তা না দিলে বিভিন্নভাবে ক্ষতি করবে বলে তাকে হুমকি দেয়। এই হুমকির খবর অন্য গ্যাং এর কাছে গেলে মেয়েদের মনে উঠার জন্য বিবাদে জড়ায় দুই গ্যাং। বিষয়টি সামনে বাড়লে চাপাতি, চাইনিজ কুড়াল, চাইনিজ ছুরি নিয়ে দু’পক্ষ মারামারি করে। এভাবেই চলতে থাকে তাদের হামলা পাল্টা হামলা। পড়ালেখার বারোটা বাজিয়ে বখাটেপনায় তারা অভ্যস্ত হয়ে সুন্দর জীবন নষ্ট করে ফেলে। আর এ কিশোর গ্যাং তৈরি হয় মা-বাবার বেখেয়ালিপনার কারণে। প্রত্যেকের বাবা-মা যদি তাদের সন্তানকে চোখে চোখে রাখেন, কোথায় যায়, কার সাথে মিশে, এসব খোঁজখবর রাখেন, প্রয়োজনে শাসন করেন, তাহলে ছেলেটা তাদের বখে যায় না, কিশোর গ্যাংও সৃষ্টি হয় না।
তারা বাবা-মায়ের ধার ধারে না। নিজেদের উশৃঙ্খল জীবন-যাপনে সাচ্ছন্দ্য বোধ করে। ছেলে একবার বখে গেলে মা-বাবার কথা তো শুনেই না, উল্টো তাদের উপর হাত তুলতেও দ্বিধাবোধ করে না। এসব কুলাঙ্গার সন্তান সমাজের শত্রু, দেশের শত্রু। নানান অপরাধে জড়িয়ে পড়া অধিকাংশ কিশোর গ্যাং গড়ে ওঠার পেছনে বিভিন্ন দলের স্থানীয় নেতাকর্মীদের মদদ রয়েছে। নিজেদের আধিপত্য বিস্তার, সিনিয়র-জুনিয়র দ্বন্দ্ব, প্রেমের বিরোধ, মাদকসহ নানা অপরাধে কিশোররা খুনাখুনিতে পর্যন্ত জড়িয়ে পড়ছে। সম্প্রতি কিশোর গ্যাংয়ের উশৃংখল ঘটনাগুলো বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়- বিভিন্ন এলাকায় কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণ করে স্থানীয় প্রভাবশালী ‘বড় ভাই’রা।
রাজধানীতে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড ও আধিপত্য বিস্তার করতে কিশোর এবং তরুণদের ব্যবহার করা হচ্ছে। নজর দিলেই দেখা যায়, বর্তমান সমাজে বেশিরভাগ মারামারি-হানাহানি, অসামাজিক কর্মকাণ্ড, ছিনতাই, ধর্ষণ, ইভটিজিং কিশোর গ্যাংয়ের দ্বারাই সংঘটিত হচ্ছে। এদিকে আইনের কাঙ্খিত শাসন না থাকায় দিন দিন কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাত বেড়ে চলেছে। সঠিকভাবে আইন প্রয়োগ করে এ গ্যাং নির্মূল করা এখন সময়ের দাবী। সঠিক পদক্ষেপ না নিলে এ সমস্যা জাতীয় সমস্যায় রূপ নিতে পারে।